অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, কৃষক ও খামারিদের তালিকা তৈরি করে দ্রুত পুনর্বাসনসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
আজ রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, শেরপুর, নেত্রকোণাসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলে বন্যায় এবং প্রবল বর্ষণে কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন একটা তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যায় যেভাবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক তৎপরতা দেখা দিয়েছিল, সেটি বর্তমানে দেখা যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক বন্যায় কৃষক ও খামারিদের অতিদ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যা উপদ্রুত মানুষ ও তাদের পরিবারের দুরাবস্থার বিষয়টি সরকারকেই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে।
রিজভী বলেন, বাজারে চাল-ডাল-সবজি ও
মাছ-গোশত-ডিমের সরবরাহ ঠিক রাখতে হলেও সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। সার,
কীটনাশক ও বীজের সরবরাহ বাড়িয়ে কিংবা প্রণোদনা দিয়ে কৃষক ও খামারিদের পাশে
দাঁড়াতে হবে। জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত আবাসন
পুননির্মাণ, পয়ঃনিস্কাশন, বিদ্যুৎ ও পুষ্টির মতো অতি প্রয়োজনীয় সেবাগুলোর
ঘাটতি যাতে না হয়, সেটি বিবেচনা করে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এই বন্যাজনিত
সঙ্কটে শিশুরা যাতে অপুষ্টিতে না ভোগে, সেজন্য সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা
গ্রহণ করতে হবে। বন্যা পরবর্তী অসুস্থতা ও পানিবাহিত রোগ নিরাময়ে পর্যাপ্ত
ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে সরকারকে কর্মতৎপর হতে হবে।
বিএনপির ছয় দাবি হলো-
১) বন্যার পানিতে যাদের জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে তাদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে আগামী ফসল না উঠা পর্যন্ত তাদের সর্বাত্মক ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা এবং আগামী ফসলের জন্য সুদমুক্ত কৃষি ঋণ প্রদান এবং বিনামূল্যে সার, রবি শষ্যের বীজ, কীটনাশক, সেচের তেলের ব্যবস্থা করা।
২) বন্যার পানিতে যে সব মৎস্য ঘের, হাঁস-মুরগী, গবাদি পশুর খামার বিনষ্ট বা ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের সঠিক তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে পুনরায় খামার প্রতিষ্ঠার জন্য সুদমুক্ত ঋণসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা।
৩) বন্যার পানিতে যাদের বাড়ি-ঘর আংশিক ও পুর্ণাঙ্গ ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের তালিকা তৈরি করে ঘর-বাড়ি পুনঃনির্মাণে সহায়তা প্রদান এবং গ্রাম/পাড়া/মহল্লা যারা বন্যায় বর্তমানে উদ্বাস্ত হয়ে গেছে, তাদের সরকারি খাস জমিতে বা আশ্রয়ন প্রকল্পে স্থানান্তরিত করতে হবে।
৪) যে সকল বাঁধ, রাস্তা, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক ও পুর্ণাঙ্গ ধ্বংস হয়ে গেছে, সেগুলো সংস্কার ও পুণঃনির্মাণ করতে হবে।
৫) বন্যার পানিতে যে সব ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে তাদের সরকারি উদ্যোগে শিক্ষা সামগ্রী ও সহায়তা প্রদান করতে হবে।
৬) বন্যার পানি নামার সাথে সাথে রোগ-বালাইগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করে চিকিৎসা দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, হারুন অর রশীদ প্রমুখ।
0 coment rios: